বিরাট কোহলি কে দেখে মনে হচ্ছে তিনি কি ভাবে আউট হচ্ছেন বা সামনেও কিভাবে আউটগুলো হবেন তার অ্যাকশন রিপ্লে দায়িত্বসহকারে টেলিকাস্ট করে চলছে প্রতিদিন, এ অসহায় আত্মসমর্পন ছাড়া আর কি বলবো, একভাবে, এক উপায়ে, প্রতিদিন কট বিহাইন্ড, বা সেকেন্ড স্লিপে আউট হওয়ার এই যে শৈল্পিক কনসিস্টেন্সি তা অবিশ্বাস্য, অভূতপূর্ব, কিন্তু তাতে কি আসে যায়? এরপর আপনি বাজারে যাবেন সেখানে হাজার বাতির ঝলকে চিন্নস্বামী চিৎকার করবে, ২৫ হাজার PR টিম আর ছেলে-ছোকরারা বসে যাবে হ্যাশট্যাগ কিং, ‘গড অফ ক্রিকেট’, ‘পাকিস্তান-কা-বাপ’ ইত্যাদি স্তূতিগাথা নিয়ে লক্ষটা ব্র্যান্ড আপনার সামনে লক্ষকোটি টাকার পাহাড় বসিয়ে দেবে আর আপনি লন্ডনের নিভৃতে প্যারিসের জল খেয়ে ভাববেন আহঃ এই তো জীবন আর CEAT Tyris, sheer Comfort Long Lasting তো আছেই …!! কিন্তু আপনার Lasting টা Long হচ্ছে কোথায় স্যার ? কোথায় ক্রিকেটের সবচেয়ে বেস্ট ভার্সনে ঐ দেশের প্রতি কমিটমেন্টটা ? জানি কেউ ইচ্ছা করে বাজে খেলেনা কিন্ত অন্যের ইচ্ছাকে বশীভূত করে নিজের ইম্প্রোভাইজেশন চাপিয়ে দেওয়ার নামই তো ডমিনেন্স, সেটাই তো শ্রেষ্ঠত্ব, প্রত্যেকটা শ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্যান বা খেলয়াড় যুগে যুগে তাই করে এসেছে , সচিন ভেবেছিলেন তিনি একটাও কভার ড্রাইভ মারবেন না, মারেননি, মার্টিন ভেবেছিলেন তিনি প্রতিটা শর্ট বল ছেড়ে দেবেন, দিয়েছেন, ট্রেসকথিক ভেবেছিলেন তাঁর প্ৰিয় কভার ড্রাইভ তিনি অস্ট্রেলিয়া তে মারবেন না, তিনি মারেননি, মেসি ভেবেছিলেন তাকে নীচে নেমে আক্রমণ তুলতে হবে তিনি করেছেন, তো এসব কি? আর তার ফলাফল টাই বা কি? এসবই তো সেই ইম্প্রোভাইসেশন এর অংশ, আজ প্রতিদিন এই এক যবনিকা পতন দেখতে দেখতে সামান্য এক গ্রামের মানুষটাও কোথাও ভাবে তাঁর জীবন হয়তো এতটা বদ্ধ বা অসহায় নয়, রিষভ পন্ত রান পাননি বা পাচ্ছেন না ঠিক আছে, শুধু ভরসা পন্ত আর বুমরাহ এর ওপরে করলে তো ১১ জনের টিম ঘোষণার কি দরকার, বরং ভালো লাগছে এই দেখে যে মান অপমানের আগুনে ঝলসে নিজেকে শান দিয়ে উঠেছে কেএল রাহুল, বিশ্বাস করুন বিজিটির একদিন আগে পর্যন্তও কোনো ভরসা ছিলোনা, কারোরই ছিলো না, ফারাক করে দিয়েছে ঐ পার্থ টেস্ট ম্যাচের আগে WACA এর সেন্টার পিচে ৮ ঘন্টা করে টানা ৩ দিন অঙ্ক করে যাওয়ার মতো একাগ্র প্রাকটিস, যেহেতু গিল চোট পাওয়ায় তাকে ওপেন করতে হবে জেনে , খুব যে একটা বড় রান পাচ্ছেন তাও নয় কিন্তু ‘গোবরে পদ্মফুলের’ মতোই কোথাও গিয়ে এই একজনের খেলা দেখেই একটু পজিটিভ মনে হচ্ছে, হ্যাঁ অস্ট্রেলিয়াতে আমরা ঠিক এই ক্লাসটাই এক্সপেক্ট করি, আজকেও যে কটা কভার ড্রাইভ ও একটা স্ট্রেট ড্রাইভ মারলেন একদম ক্রিকেট দেবতার মনুসংহিতা থেকে তুলে আনা ব্যাকারণ মেনে যেন.. শুভমন গিলকে নিয়ে কথা বলার কিছুই নেই বরং যদি লক্ষ্যনীয় কিছু থাকে তবে সেই ‘কমিটমেন্টের অভাব’ আর ‘কনজিউমারিজমের দাসত্ব’ , ২০২১ এর গ্যাবা তে ঐ ৯১ রান আর আজকের গিলের মধ্যে এখন ভারত-অস্ট্রেলিয়া সমানই দূরত্ব, হেড পজিশন ঠিক নেই, ফুল লেংথ বা ব্যাক অফ দা লেংথের বল বুঝতে পারছে না কোনটা কোন পায়ে খেলবে আর সেই শরীর আর প্যাডের মাঝে ফোরলেন হাইওয়ের গ্যাপ, মিচেল মার্শ নাহয় একটা অসম্ভব সুন্দর ক্যাচ ধরেছেন কিন্তু অস্ট্রেলিয়াতে খেলতে নেমে অস্ট্রেলিয়াকে হাফ চান্স দেওয়া তাও আবার স্লিপ কর্ডনে এটার আরেক নাম যে ‘আত্মহত্যা’ এটা বুঝতে বুঝতে সিরিজটাই না শেষ হয়ে যায় , মোট কথা পিচে এখনো কোনো জুজু নেই, যারা বলছে বাজে কথা বলছে, রিষভ পন্ত বাদে বাকি তিনজনই একেবারে নিজেদের স্বভাবসিদ্ধ ভাবেই লোপ্পা বলে আউট হয়েছেন, পিচ বিগড়লে বিগড়ে যাবে কাল সকাল থেকে, কারণ স্বাভাবিক ভাবেই পিচ আজ সারারাত ডবল কভারের নিচে থাকবে বাইরে হিউমিড ওয়েদার ফলে ভেতরে পিচ ভৌতধর্মের নিয়ম মেনেই ঘামবে আর আজ ১৭ ওভার খেলার পর ধরাই ভালো ঐ আপাত নতুন বলেই শুরু হবে কালকের দিন, সেক্ষেত্রে প্রথম ১৫ ওভার, আর টিকে থাকলে ৫১/৪ থেকে কতটা রান টানা যায় সেটাই এখন ব্যাপক প্রশ্নচিহ্নের মুখে,, আউট অফ ফর্ম রোহিত শর্মা পারবেন কি রাহুলের সাথে একটা বড় পার্টনারশিপ গড়তে, এখন সেটা অলীককল্পনা, আপাতত এখন যা পরিস্থিতি তাতে ফলো অনের বিষয়টাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছেনা যেখানে টপ অর্ডার এত দায়িত্বজ্ঞানহীন।।
তাই বলছি বৃষ্টিটাই কিছুটা এই ব্যাটিং-কঙ্কাল ঢেকে রাখতে পারে হয়তো, তবুও এখন থেকে বাঁচলেও এই Down and আন্ডার বা Escapist Mentality নিয়ে বক্সিং ডে টেস্ট বা সিডনি তে কি হবে? উত্তর নেই কিছু, আর থাকলেও তা ভারতীয় ক্রিকেট ফ্যানদের কাছে যে প্রীতিকর নয় তা বলার অপেক্ষা রাখেনা, তবুও চাই সব কিছু পেরিয়ে দলটা উঠে দাঁড়াক ফিরে আসুক নিজের মর্যাদা নিয়ে, আপাতত এই আশা ও প্রার্থনাটাই রাখতে ও করতে পারি ।