রাশিয়ায় হামলা করায়, ইউক্রেনকে তীব্র সমালোচনা : ট্রাম্পের

যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার ভূখণ্ডের গভীরে ইউক্রেনের হামলার তীব্র নিন্দা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। টাইম ম্যাগাজিনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘যা ঘটছে, তা সম্পূর্ণ পাগলামি।’

টাইম ম্যাগাজিনের ২০২৪ সালের ‘পারসন অব দ্য ইয়ার’ বা বর্ষসেরা ব্যক্তি নির্বাচিত হয়েছেন ট্রাম্প। গতকাল বৃহস্পতিবার ম্যাগাজিনটিতে ট্রাম্পের একটি সাক্ষাৎকার ছাপা হয়।

সেখানে ট্রাম্প বলেন, ‘এটা পাগলামি। রাশিয়ার কয়েক শ মাইল ভেতরে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ নিয়ে আমার তীব্র আপত্তি রয়েছে। আমরা ওটা কেন করছি? আমরা শুধু এই যুদ্ধে উত্তেজনা বাড়াচ্ছি এবং এটিকে আরও খারাপ করে ফেলছি। এটা করতে দেওয়া উচিত হবে না।

তবে কী ট্রাম্পের আমলে ইউক্রেন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে পরিবর্তন আসতে চলেছে? ট্রাম্পের এই মন্তব্য সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে।

গত মাসে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ভোটের পর বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনের ওপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা দীর্ঘপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার ভেতরে হামলার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। যুদ্ধে কিয়েভের মনোবল বাড়াতে এটা ছিল বাইডেনের শেষ চেষ্টা।

তার আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বারবার এ অনুমোদন চেয়েছিলেন। কিন্তু শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র অনুমতি দেয়নি। গত মাসে অনুমোদন দেওয়ার পক্ষে যুক্তি হিসেবে হোয়াইট হাউস বলেছে, উত্তর কোরিয়ার ১৫ হাজার সেনাকে যুদ্ধ করতে ইউক্রেন পাঠিয়েছে রাশিয়া। মূলত এ কারণে নিজের মত পরিবর্তন করছেন বাইডেন।

প্রায় তিন বছর ধরে ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে। ট্রাম্প বলেছেন, তিনি দ্রুত এ যুদ্ধের অবসান চান। এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কোনো তথ্য তিনি দিতে চাননি। তিনি টাইমকে বলেছেন, সাহায্য করার জন্য তাঁর কাছে ‘দারুণ একটি পরিকল্পনা আছে’। কিন্তু তিনি যদি এখন সেটি প্রকাশ করে দেন, তবে ‘সেটা প্রায় অর্থহীন একটি পরিকল্পনায় পরিণত হবে’।

তিনি ইউক্রেনকে পরিত্যাগ করবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে চাই এবং আপনি যদি একটি চুক্তিতে উপনীত হতে চান, তার জন্য একমাত্র পথ পরিত্যাগ করা নয়।’

যুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার সেনাদের প্রবেশকে তিনি ‘খুবই জটিল বিষয়’ বলেও মন্তব্য করেছেন।

আগামী ২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন ট্রাম্প। গত সপ্তাহান্তে প্যারিসে তিনি জেলেনস্কি ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।

ট্রাম্পের দ্রুত যুদ্ধ শেষ করার প্রতিশ্রুতি কিয়েভে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। তাদের ভয়, চুক্তিতে বেশির ভাগ সুবিধা হয়তো মস্কোর ভাগে যাবে।

টাইমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইউক্রেন যুদ্ধে সাধারণ মানুষের নিহত হওয়ার সংখ্যা নিয়েও হতাশা প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। বিশেষ করে গত মাসে হতাহতের সংখ্যায় তিনি ‘স্তম্ভিত’ হয়েছেন।

ট্রাম্প বলেন, ‘আমি উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলছি। একটি চুক্তিতে উপনীত হওয়া উভয় পক্ষের জন্যই ভালো হবে।’

রাশিয়া ও পশ্চিমা কয়েকজন কর্মকর্তা ধারণা প্রকাশ করে বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ সম্ভবত এটির চূড়ান্ত এবং সবচেয়ে ভয়ংকর ধাপে প্রবেশ করছে। যুদ্ধের শুরুর কয়েক সপ্তাহ বাদ দিলে রাশিয়ার সেনারা এখন সবচেয়ে দ্রুততম গতিতে অগ্রসর হচ্ছেন।

যুক্তরাষ্ট্র গত শনিবার ইউক্রেনের জন্য আরও ৯৮ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলারের অস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জাম–সহায়তা প্যাকেজ অনুমোদন দিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *